আমার মায়ের খুব আদরের একটা বিড়াল ছিল। নাম রেখেছিলেন সখি। সখিকে নিয়ে মায়ের গল্পের শেষ নেই। সখি উনার সাথে বইপড়ে, তছবিহ পড়ে, তাঁর সাথে খাওয়াদাওয়া করে এবং এক সময় তাঁর সাথে বিছানার কোনায় ঘুমিয়ে পড়ে। তবে আম্মা ঘুমাতে দেরি করলে সে কাছাকাছি হাঁটাহাঁটি করতো, ঘুমাতো না।
এক দিন দেখি আম্মা সখী কে নিয়ে আমার বাসায় চলে এসেছেন। আমি তাকিয়ে দেখি সখী আম্মার কোলে। আমার ছেলে মেয়ে খুব খুশী নানুর বিড়ালটি দেখে। ! সখি আমার বাসায় থাকে, খায়, হাঁটাচলা করে, কিন্তু ঘুমায় আম্মার সাথে, আম্মার বিছানায় । আম্মা বলেন, আমি বাড়িতে না থাকলে সে খায় না। আমাকে খেতে না দেখলে তাঁকে কেউ খাওয়া দিলেও খাবে না, এইজন্য এরে এবার সাথে করে নিয়ে এসেছি।
এক দিন আম্মাকে নিয়ে দোকানে গিয়েছিলাম। শুনি কাজের মেয়ে বলছে, খাল্লাম্মা বিড়ালটি কোনকিছুই খাচ্ছে না, তোমার জন্য কান্নাকাটি করছে।
আম্মা বললেন, মাছ ভেজে দেয়। ও যেকোন খাবার খেতে পারে না।
পরদিন বাড়ি চলে গেলেন আম্মা। বাড়িতে গিয়ে তাঁর সখিকে গোসল করিয়ে কোলে নিলেন।
এর কয়েকদিন পরে আমি যখন বাড়িতে গেলাম, সখিকে দেখি না।
আম্মকে বললাম – তোমার সখি কই?
আম্মা জবাব দেন না। তিনি সামনে থেকে চলে যান।
কাজের মেয়েটি কাদো কাঁদো গলায় বলে- আমাদের সখী মারা গিয়েছে।
কিভাবে ?
মেয়েটি বলে- আপনার আম্মার কোলে উঠতে লাফ মেরে নিচে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে লুটিয়ে পড়ে, আর উঠতে পারে না। মারা গেছে।
তারপর ?
মেয়েটি বললো-আামি ও খাল্লামা খুব কান্না কাটি করলাম। তারপর কাপড় পরিয়ে পুকুরপাড়ে গর্ত খুড়ে তাকে কবর দিয়ে এলাম ।
এখন বাড়ি গেলে আর কোন সখি দেখি না । আম্মাকে বলি, তোমাকে আরেকটা বিড়াল দেই ?
আম্মা বলেন, না। লাগবে না।
(ফেইসবুক ইনবক্স থেকে)