এক অভিমানের নাম ‘শাকুর মজিদ’

২০১৪ সালে ৫০তম জন্মদিনে লেখা

সে অনেককাল আগের কথা। সন , তারিখ মনে নেই। আমি তখন ভোরের কাগজে সঞ্জীব দা’ (সঞ্জীব চৌধুরী)র নেতৃত্বে কাজ করি। একটু আধটু লেখার সুযোগ পাই। আর ভেতরে ভেতরে বড় হওয়ার স্বপ্ন বুনি। দাদা ছোট খাটো এসাইনমেন্ট দেন। আমি সেগুলো শেষ করে নতুন অ্যাসাইনমেন্টের অপেক্ষায় থাকি। তখন ‘লন্ডনী কইন্যা’ নামের একটি টিভি নাটক নিয়ে হৈচৈ। আমি দাদা’কে বললাম। দাদা এই নির্মাতার ইন্টারভিউ করি আমি।
আমার আবদার শুনে দাদার কপোট ধমক।
‘তুই পারবি না। খুব পন্ডিত মানুষ উনি। তার সম্পর্কে তোর কতটুকু জানাশোনা, বলতো? আর এ নাটক নিয়ে কি কি ঘটছে চারিদিকে সেইসব খবর রাখিস ? বলতো এক এক করে।’
ভোরের কাগজের মিটিং রুমে এক গাদা তরুন তরুনীদের ভেতরে আমাকে সেই কঠিন পরীক্ষায় ফেলা হলো। যথারীতি আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম! তার সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি তাও ভুলে গেলাম! গুছিয়ে বলতে পারলাম না।
সেই অপমান নিয়ে সেদিন ভোরের কাগজ থেকে বের হলাম। আর ঐ মানুষটার প্রতি এক নিদারুণ অভিমান বুনতে বুনতে বাসায় ফিরলাম। এতগুলো কন্ট্রিবিউটরের সামনে আমায় অপমান! কিভাবে সইবো আমি! মাথার ভেতরে সেইসব ঘুরতে লাগলো। মনে আছে টানা তিনদিন আমি কিছুই লিখতে পারিনি। প্রায় মাথা নীচু করে ভোরের কাগজে ঢুকতাম। এরপর আমাকে বেকুব বলে আলতো আদরসুলভ পিঠ চাপড়ে দাদা নতুন এক গায়কের ইন্টরভিউ করতে পাঠালো। আমার প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা।
আমার সাংবাদিকতা জীবনের সেই অভিমানের নাম ‘শাকুর মজিদ’। সত্যিকার অর্থে এই পন্ডিত ব্যক্তির ইন্টারভিউ আমার সে সময়ে নেবার ক্ষমতা ছিল না।
এর বহুকাল বাদে বিচ্ছিন্ন কিছু দেখা.-সাক্ষাত ও যোগাযোগের পর আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সিদ্ধ পল্লীর পতিতা’ বের হবার পর তিনি নিজে এসে স্টল থেকে বইটি কিনলেন। আমি ভেবেনিলাম। সৌজন্য ¯দেখাচ্ছেন তিনি। বেশ কিছুদিন পর তিনি যখন গল্পগুলো ধরে ধরে বলতে লাগলেন তখন তার প্রতি মোহগ্রস্থ হয়ে পড়লাম। তার ভ্রমনগদ্য, স্মৃতিগদ্য আমি শুধু পড়ি না, গোগ্রাসে গিলি। আমার গানের ব্যাপারে দারুন অনুপ্রেরণা দেন তিনি।
শাকুর ভাইয়ের সাথে এখন তাই যতবার এই সম্পর্কের বাহাসগুলো ঘটে, ঠিক ততবারই আমি সেই দাদার কপোট ধমকের স্মৃতিতে ফিরে যাই।
‘তুই পারবি না। খুব পন্ডিত মানুষ উনি। তার সম্পর্কে তোর কতটুকু জানাশোনা, বলতো?…
আজ আমার সেই প্রিয় পন্ডিত ব্যক্তিত্বের জন্মদিন।
আরো অনেক অনেক বছর ধরে আলো ছড়ান শাকুর ভাই!
আপনি যে আমার এক অভিমানের নাম না শুধু। আমার অলিখিত , অদেখা এক অনুপ্রেরণার নাম!
……………………
অনেক কষ্ট করে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, আইফোন, ট্যাবএর ফটোগ্যালারী তন্ন তন্ন করে খুঁজেও শাকুর মজিদ ভাইয়ের সাথে আমার কোনো পাশাপাশি দাঁড়ানো বা বসা ছবি পেলাম না। অবশেষে আমি, প্রিয় নোমাপা আর শাকুর ভাইয়ের এই পুরোনো ছবিটিই পোষ্ট দিতে হলো..
বি: দ্র: শাকুর ভাই , খুব শিগগিরই আপনার আর আমার এই ছবির দুরত্বটা ঘোচাতে হবে।
শেষে জীবনের এই হাফ সেঞ্চুরী পূরনে শুভ কামনা, শুভ কামনা এবং শুভ কামনা।
মন্তব্য
Loading...