বুয়েটকাল – আহমেদুর সবুজ

বুয়েটকালে ১৯৮৮ সালের ত্রাণততপরতা

বইটি স্থপতি শাকুর মজিদের লেখা। তার বুয়েটের সময় নিয়ে মাঝে মাঝেই তিনি বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক লেখা লিখতে হয়েছে বিভিন্ন অ্যালামনাই এর জন্যে, সেসব লেখার একটা সংকলন করে এই বই। তাকে ব্যক্তি হিসেবে বেশ গোছানো অবস্থায় আবিষ্কার করি এই বই পড়ে, অন্তত এই মাত্রার একটা বই প্রকাশ করতে পারার জন্যে হলেও।

১৯৮৫ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত তিনি বুয়েটে পড়েছেন। এমনিতেই স্থাপত্যে কোর্স ৫ বছরের, যেখানে অন্যসব কৌশল ৪ বছরের; তার উপর লেখালেখি, সাংবাদিকতা এগুলো নিয়ে ব্যাস্ত থেকে এক বছর পিছিয়ে গেছেন। সামরিক সরকারের যাঁতাকলে পড়েও আরও কিছু সময় সেই সময়ের সব ছাত্রদেরই নষ্ট হয়েছে। এতকিছুর পরেও তিনি জীবনে একজন সফল মানুষ, আর সফল মানুষের জীবনকথা পড়তে ভালোই লাগে। সেগুলোর ভাষাও হয় আশাজাগানিয়া।

দারুণ সহজ ভঙ্গিতে সাবলীল লেখা, পড়তে বেশ আনন্দ হয়েছে। নিজে বুয়েট আর্কিতে পড়ার সুযোগ পেয়ে পরে মেডিকেলে পড়েছি কিন্তু আমি নিজেকে এখনো আবিষ্কার করি “আর্কি মেটেরিয়াল” হিসেবে! আমি এখনো আঁকতে, কিছু লিখতে পছন্দ করি, ছবি তুলতে পছন্দ করি, এইসব কাজ ঠিক ডাক্তারদের সাথে যায়না; মানে এই বাউন্ডূলে স্বভাব। সেজন্যে হয়তো এই লেখা পড়ে কিছুটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করেছে।

বইয়ে সেই সময়ের কিছু আভাস পাওয়া যায়। একটা সামরিক শাসনে চলা দেশের অবস্থা, একটা প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে চলেছে সেটা আচ করা যায়। প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড়ে ত্রাণ দেয়া, সেইসময়ের ঢাকাকে আবিষ্কার করা, সমকালীন রাজনীতি এসবের চিত্র উঠে এসেছে লেখায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে উঠে আসে লেখকের নিজের বুয়েট এ থাকাকালীন সময়টুকু। তার টিউশনি করে চলা, সাংবাদিকতা, স্বচ্ছলতার বিলাসিতা আবার অন্যদিকে শারীরিক অসুস্থতা আর জীবন সংগ্রাম। সহপাঠী হিসেবে এখনকার খ্যাতনামা অনেককেই আবিষ্কার করি তার লেখায়। ছবিতোলায় তার দারূণ অর্জন মোহিত করে আবার বুয়েটে তার সাইকেল “পংখীরাজ” আর তাতে করে সহপাঠিনীদের সাইকেল ড্রাইভিং কোর্স করানো রোমাঞ্চ জাগায়।

প্রতিটি ছাত্রের জন্যই তার শিক্ষাজীবন এক অনন্য সময়, সেই সময়ে যদি সাংবাদিকতা, লেখালিখি, ছবি তোলা, আয়োজনের দায়িত্বে এগুলোকে সাথে করে চলা যায় তবে সেই সময় হলে ওঠে সত্যিকারের জীবন্ত। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ ও তাই দারুণ সুখপাঠ্য!

মন্তব্য
Loading...