বুক রিভিউ – শাকুর মজিদের ভ্রমণসমগ্র-১

ফেইসবুকে ১৫.৪.২১ তারিখে লিখেছেন - শাকিল আহমেদ, চিকিৎসক - বারডেম হাসপাতাল

ডরিক, করিন্থিয়াম, বাইজান্টাইন, আয়োনিক এই নামগুলি নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিন্তু কয়জন জানেন এগুলি আসলে কি। জানতে হলে বিখ্যাত স্থপতি শাকুর মজিদের হাত ধরে পাড়ি দিতে হবে এথেন্স থেকে নিউইয়র্ক আর ইউরোপের নানা শহরে।

স্থাপত্যবিদ্যা ছাত্র শাকুর মজিদের জন্ম সিলেটে। বুয়েট থেকে পাশ করার পর তিনি স্থাপত্যবিদ্যার উপরেই কাজ করেছেন কিন্তু সেই সাথে ছিল তার ভ্রমণ মানসিকতার কারণে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ানো। সেই দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ানো নিয়েই তার এই ভ্রমণ সমগ্র।

ভ্রমণসমগ্রটি ৪ খন্ডে বিভক্ত। তার প্রথম খন্ড ভ্রমণসমগ্র -এক।

এখানে আসলে লেখক তার পাঁচটি দেশে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে বর্ণনা করেছেন। পাঁচটি অংশের নাম দিয়েছেন লেখক আমিরাতে তেরোরাত, আমেরিকাঃ কাছের মানুষ দূরের মানুষ সক্রেটিসের বাড়ি আর পাবলো নেরুদার দেশে

১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ভ্রমনের প্রথম পাঁচটি গ্রন্থ সংকলন নিয়ে শাকুর মজিদের ভ্রমণ সমগ্র এর প্রথম খণ্ড।

১৯৯৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দু সপ্তাহের ভ্রমণ ছিল লেখকের প্রথম কোন বিদেশ ভ্রমণ। বাল্যকালের বন্ধু মোস্তফা আর সানুর হাত ধরে লেখক ঘুরে বেড়িয়েছেন আমিরাতের গলি থেকে রাজপথে। প্রথম বিদেশ ভ্রমণের উত্তেজনা হারে হারেই টের পাওয়া গেছে লেখকের বর্ণনায়। আমিরাতের বিভিন্ন শহরের বর্ননার সাথে লেখক উঠিয়ে এনেছেন সেখানকার প্রবাসী বাংগালীদের সুখ দুঃখের কথা। অংশীদার হয়েছেন তাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার। প্রসংগান্তরে উঠে এসেছে সেখানকার শিক্ষা ব্যাবস্থা আর সাস্থ্য ব্যাবস্থার কথাও। আল আইন আর জেবেল হাফিতের প্রকৃতি বর্নানার সাথে বাদ পড়েনি দুবাইয়ের শপিং মলের জৌলুসও। আমিরাতের সপ্ন গড়ার কারিগরকে কাছ থেকে জানার এক অনন্য সুযোগ এই আমিরাতে তেরোরাত অংশ।

২০০১ সালে ৫ সপ্তাহের জন্য আমেরিকা ভ্রমণ করে এসে লিখলেন দ্বিতীয় ভ্রমণ গ্রন্থ আমেরিকা কাছের মানুষ দূরের মানুষ

ঢাকা থেকে দুবাই আর লন্ডন হয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকার হিউস্টন। দীর্ঘ যাত্রার ট্রাবলস্যুট অপরুপ মুন্সিয়ানায় তুলে ধরেছেন, যা যে কোন ট্রাভেলারের কাজে লাগবে। পাচ সপ্তাহের আমেরিকা ভ্রমণে লেখক ছুটে বেড়িয়েছেন এক স্টেট থেকে আরেক স্টেটে। কখনও সংগী হিসাবে পেয়েছেন বাল্যকালের কোন সুহৃদকে। স্বভাবতই স্মৃতিকাতরতায় আক্রান্ত হয়েছেন। পড়তে পড়তে আজন্তে পাঠকের চোখও ভিজে উঠতে পারে। হিউস্টন থেকে মিশিগান, শিকাগো, লস এঞ্জেলস, হলিউড, লাস ভেগাস, ডালাস হয়ে নিউইয়র্কে থেমেছে লেখকের ক্যারাভান। মাঝে বোস্টনে দুই বাল্য বন্ধুর আতিথ্য গ্রহণ করে তবেই দেশের পথে পা বাড়িয়েছেন।

২০০৩ সালে চিলিতে এক স্থাপত্য সম্মেলনে যাওয়া উপলক্ষে দু সপ্তাহ ইউরোপের ৩ শহরে ঘুরে লিখেন সক্রেটিসের বাড়ি আর এক সপ্তাহ চিলি দেখে লিখেছিলেন পাবলো নেরুদার দেশে

সক্রেটিসের বাড়ি আদতে গ্রীসে হলেও, এখানে লেখক ইউরোপের তিন সিটি বার্লিন, এথেন্স আর প্যারিসের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। পড়তে পড়তে মনে হবে যেন এক্রোপলিসের চূড়া থেকে পার্থেনন, এরিকথিয়ন হয়ে ব্রান্ডেনবার্গ গেট দিয়ে ইহুদি জাদুঘরের চত্বরে সামনের রাস্তা মাড়িয়ে উপস্থিত হয়েছেন মোনালিসার সামনে। মুগ্ধতার আবেশ কাটতে না কাটতেই সামনে দেখতে পাবেন আইফেল টাওয়ার কে। কিংবা কখনও মনে হবে এই বুঝি পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন সক্রেটিস, প্লেটো কিংবা নেপোলিয়ন বোনা পার্ট স্বয়ং। মুগ্ধতার রেশ আরো বাড়িয়ে দিতে লেখকের হাত ধরে ব্রাজিল আর প্যারাগুয়ে হয়ে পাড়ি দিতে হবে পাবলো নেরুদার দেশ চিলিতে।

এর পরও যদি আশ না মিটে তাহলে ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড স্কটল্যান্ড এর কয়েকটি শহরের গল্প নিয়ে সাজানো নদীর নাম টে তো রয়েছেই।

যেখানে আপনি স্বাদ পাবেন ডান্ডির সাথে বাংলাদেশের আত্নার বন্ধন, স্কটল্যান্ডের আভিজাত্যের অহংকার কিংবা অক্সফোর্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরুপ পরিবেশের সাথে।

লেখক তার ভ্রমণ শেষ করেছেন নিউ ক্যাসেল শহরে তার নাটকের শুটিং এর কাহিনি শুনিয়ে, যেখানে উপস্থিত আছে নায়ক মাহফুজ থেকে অকাল প্রয়াত মিশুক মুনীর পর্যন্ত।

 

 

মন্তব্য
Loading...