বুয়েটকাল – ফুজেল আহমদ

#গ্রন্থালোচনা : 📕📖 বুয়েটকাল……
বইটি প্রকাশিত হবার পরেই বাংলাদেশ হতে আনাই কিন্তু বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ডের পরে বুয়েট নিয়ে জানার ইচ্ছে এক্কেবারেই আগ্রহের তলানিতে এসে পৌঁছে।
এই লকডাউনের বইটি হাতে নিয়ে এক দমেই শেষ করি শ্রদ্ধেয় শাকুর মজিদ এর আত্মজৈবনিক রচনা বুয়েটকাল। ব্যক্তিগত ভাবে জানাশোনা স্পষ্টবাদী এই ব্যক্তিত্বের ; লেখক সত্তার লেখনিতে ও সেই ধারাবাহিকতা আরো শানিত। অবলীলায় যিনি বলে যাচ্ছেন উনার খুবই অভাবের এবং সেই সাথে বৈচিত্রপূর্ণ জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়কালকে।
আমাদের মতো যারা স্কুল -কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রজীবন কাটিয়েছেন কিংবা ভবিষ্যতে কাটাবেন তাদের জন্য এই বইটি এক‌টি নির্দেশিকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রদের জন্য একটি গাইড হিসাবে এক দলিল।
আগাগোড়া এই সুপাঠ্যটি পাঠে প্রত্যেকটি পাঠকই কোন না কোন অধ্যায়ে এসে আবিষ্কার করবেন আরে এতো আমারই জীবনের একটি চিত্র যেটি ভেবেছি কিন্তু কোথাও লেখার সুযোগ হয়নি।
এখানেই লেখকের সাফল্য পাঠকের ভিতর দিয়ে নিজেকে নিয়ে যাওয়া তাও খুবই সাবলীলভাবে।
একজন পাঠক হিসাবে দুএকবার মনে হয়েছে পড়ার গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সেটি কিছু নিউজের উপস্থিতি কিংবা নোট বুকের অংশ বিশেষের কারণে। ইতিহাস কিংবা তথ্যের জন্য হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ও। এসব এক্কেবারে শেষে ও উল্লেখ করা যেতো হয়তো বা।
মফস্বল হতে বেরিয়ে পড়া একজন তরুনের রাজধানীর বুকে রাজ করা কিংবা চ্যাম্পিয়নদের ভীড়ে চ্যাম্পিয়ন হবার যে অদম্য বাসনা নিয়ে লেখকের এগিয়ে চলা সেখানে পংখীরাজ নামক বাইসাইকেলটি ও আসলে কখনো কখনো মূল চরিত্রের চাইতে ও বড় চরিত্র হয়ে উঠেছে। তেমনি ক্যামেরাটি যেন এক বৈচিত্র্যময় ঘটনার কাল সাক্ষী না হয়ে ; হয়ে উঠেছে লেখকের অসংখ্য গল্পের স্লট।
ক্যামেরা এবং সাইকেল নিয়ে অবলীলায় লিখতে পারেন আরো অসংখ্য জীবনযাপনের খন্ড চিত্র।
উনিশ অধ্যায়ে রচিত বুয়েটকালে লেখকের টিউশনকাল আর অসুখকাল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে।
টিউশনকালের যে চিত্রটি লেখকের জীবনের পরতে পরতে মোকাবেলা করেছেন ; একজন তারুণ্যের ছুটে চলা , বালক বয়সে পরিবারের হাল ধরা এবং রাজধানী শহরের অসংখ্য অন্ধকার গলির আহবানকে পরাস্ত করে নিজেকে মূল ট্রাকে রাখা সেটি শুধু ছাত্রাবাস কিংবা লজিং এ থাকা ছাত্রদের জন্য নয় বরং এই যে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস হিসাবে যারা দেশের বাহিরে আসতেছেন তাদের জন্য ও এক মোটিভেশনাল ডায়েরি হলো এই বুয়েটকাল।
এখানে (কানাডা) ও দেখি অসংখ্য স্টুডেন্ট এর মাঝে কারো কারো প্রতিমাসে টাকা আসে দেশ থেকে আবার অনেকেই আছে যারা টাকা তো আনেইনা বরং প্রতিমাসে টাকা পাঠায় পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য নিজের টিউশন ফি ম্যানেজ করে ও। ইচ্ছে শক্তি আর গন্তব্যে পৌছার অদম্য দম নিয়ে রাজনৈতিক -সামাজিক -পারিবারিক সব ছায়া মাড়িয়ে লেখকের যে যাত্রা সেটি প্রতিটি ছাত্র কিংবা পাঠকের জন্য যেন একটি বাস্তব চিত্র। আরে এতো আমি ই কিংবা আমি কেন নয়?
অসুখকাল অধ্যায়ে এক দিকে যেমন আত্মপ্রত্যয়ী এক যোদ্ধার পরিচয় পাওয়া যায় যেখানে মায়ের কাছে নিজের কস্ট আড়াল করার চেষ্টা তেমনি এক খেয়ালি যুবক যাকে ডাক্তারদের নিয়মকানুন নিয়মিত ই ভাঙ্গার চেষ্টাতে ব্যস্ত দেখা গেছে। কিছুদিন আগে সিলেট থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে এয়ারপোর্ট রোড়ে একটি দূর্ঘটনায় পড়ে একই কায়দায় ঢাকা পৌছেন এই লেখক । এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে ডাক্তার বড় না ইঞ্জিনিয়ার বড়। আবাসিক এবং প্রবাসী ছাত্রদের এই অসুখ লুকানোর তরিকাটি কি তাহলে পরম্পরায় চলে আসলো।
ত্রানকালে ফুটে উঠছে সে সময়ের ছাত্ররাজনীতির কিংবা ছাত্রদের সবচাইতে পজিটিভ দিক যা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।
বুয়েটকাল আসলেই একটি সময়েকে কিংবা সময়ের আংশিক একটি চিত্র কে ধারণ করেছে। সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, হলের জীবন, ছাত্রদের বৈচিত্র্যময় চিন্তাভাবনা , এবং ক্রিয়েটিভ কার্যক্রমের এক পজিটিভ দলিল।
ভুমিকম্প কে মারতে যাওয়া ছাত্র তখনো ছিলো কিন্তু দুইযুগ পরে আজ এই ক্যাম্পাসেই যখন শুধু মাত্র ভিন্নমত প্রকাশের জন্য রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে হবু ইঞ্জিনিয়াররা “আবরার ” এর মতো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তখন বলাই যায়; হয়তো প্রযুক্তির অভাব ছিলো সে সময়ে কিন্তু যায় দিন ভালো ছিলো বলতেই পারেন সে সময়ের ইয়ার ড্রপ করা আমাদের স্থপতিরা ও।
টরেন্টো। কানাডা।
এপ্রিল -২৮/২০২১
মন্তব্য
Loading...