শাকুর মজিদের হুমায়ূননামা- আনিকা ইউনুস

ফেইসবুকে প্রকাশিত বইয়ের আলোচনা

বইটি হাতে পেয়েই ভেবেছিলাম বইটি নিয়ে কিছু লিখবো কিন্তু লিখি লিখি করে আর লেখা হয়ে উঠছিল না। আজ যেহেতু হুমায়ুন আহমেদ স্যারের মৃত্যু দিন, ভাবলাম আজই হয়তো বেস্ট দিন উনাকে স্মরণ করে কিছু লেখার।
শাকুর মজিদ ভাইয়ের’ হুমায়ূননামা ‘ বইটির ছবি দেখেই অনুমান করা যায় প্রকাশনার মান আকর্ষণীয় ও নান্দনিক হয়েছে। লেখার ভাষাও খুব সাবলীল।
হুমায়ূন আহমেদ, তাঁকে ঠিক কি কি বিশেষণ দেয়া যায়? যদি আমার ভাষায় বলি ভালোবেসে বইপড়া যে শিখিয়েছেন তার নাম হুমায়ুন আহমেদ। ছোটবেলায় অলস দুপুরগুলোতে আচার আর বই হাতে সময় কাটাতে শিখিয়েছেন হুমায়ুন আহমেদ। একাধারে তিনি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর নির্মিত প্রতিটি নাটক, চলচ্চিত্র, গান এখনো প্রতিনিয়ত মানুষকে হাসায়, কাঁদায়। কতটা সাবলীল তাঁর প্রতিটি ডায়ালগ আর্টিস্টদের মুখে!
আমার কাছে সবসময়ই মনে হয় একজন শিক্ষক, একজন লেখক হলেন পাবলিক ফিগার। এঁদের মানুষ ফলো করে। সমাজের প্রতি এঁদের দায়িত্ব অনেক। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন সবদিক থেকে এগিয়ে। তাঁর ছিল পাঠক সমাজ, ছাত্রদের মাঝে জনপ্রিয়তা। আমার কাজিন ভাই ছিলেন হুমায়ুন স্যারের সরাসরি ছাত্র। আমার এখনো মনে আছে যেদিন স্যারের ক্লাস থাকতো, আমি বসে থাকতাম ভাইয়ার কাছে স্যারের ক্লাসের গল্প শুনবো। উনার ছিল মানুষ কে মুগ্ধ করতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা। সেই দিক থেকে স্যারের কাছে আমাদের সাধারণ পাঠক সমাজের অনেক পাওনা ছিল যা উনি দিতে ব্যার্থ হয়েছেন পরবর্তীতে নন্দিত হবার সাথে সাথে নিন্দিত হবার কারণেও।

এবার ‘ হুমায়ূননামা ‘ বইটা নিয়ে যদি বলি, আমার মনে হয়েছে বইটি লেখক শাকুর মজিদের দৃষ্টিকোন থেকে হুমায়ূন আহমেদের একটি জীবনী। লেখকের সাথে হুমায়ুন আহমেদ এর পরিচয় থেকে শুরু করে কাছে আসা, পথচলা এবং কাছের হয়ে ওঠার ঘটনাগুলিই উনি বইটি তে তুলে এনেছেন। আমার মনে হয়েছে লেখক বইটি তে লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর চেয়ে ব্যাক্তি হুমায়ূন আহমেদ কে বিশেষ ভাবে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন আমাদের সামনে। লেখক বইটা তে বহুবার উল্লেখ করেছেন হুমায়ুন আহমেদ মুগ্ধতা পছন্দ করতেন এবং বইটা তে হুমায়ুন আহমেদ এর প্রতি লেখকের মুগ্ধতাও প্রকাশ পেয়েছে যা সত্যিকার অর্থে আমার মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে। বইটি পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে, কেউ যদি ব্যাক্তি হুমায়ূন আহমেদকে জানতে চায়, তার ‘হুমায়ূননামা’ বইটি ভালো লাগবে।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে। আমি আগেই বলেছি উনি আমাদের অনেক কিছু দিতে পারতেন। হুমায়ুন আহমেদ স্যার ব্যক্তিগত ভাবে আমার কতটা অপছন্দের আর কতটা ভালোবাসার মানুষ আমি প্রকাশ করতে পারবো না। সামান্য ২-৪ লাইন লিখে উনার প্রতি মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা যায় না। যদিও মানুষ বাঁচে তাঁর কর্মের মাধ্যমে। তবে একটা কথায় আমি চরম বিশ্বাসী, মানুষকে তাঁর কর্মের মাঝে বেঁচে থাকতে হলেও ব্যাক্তি জীবনে অনেক স্থিতিশীল হতে হয়। উনিই একমাত্র, যাঁর ব্যাক্তি জীবন নিয়ে টানাপোড়ন থাকা স্বত্বেও উনি বেঁচে থাকবেন গর্বের সাথে।
কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিক যেখানে থাকুন ভালো থাকুন। আপনার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
১৯ জুলাই ২০২১
– আনিকা ইউনুস- অধ্যাপক, পানিসম্পদ বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য
Loading...