গ্রন্থ: ক্লাস সেভেন ১৯৭৮- মোঃ কামরুজ্জামান
যা পড়েছি
যা জেনেছি
গ্রন্থ: ক্লাস সেভেন ১৯৭৮
লেখক: শাকুর মজিদ ( #Shakoor_Majid )
প্রচ্ছদ: মাসুম রহমান
প্রকাশক: মাজহারুল ইসলাম
অন্য প্রকাশ, ৩৮/২-ক বাংলা বাজার; ঢাকা।
মূল্য: ১৩০ টাকা।
#ভূমিকা: ‘কোন কোন বাসায় গেলে অনেক কিছু দেখতে পাই। তবুও মনে হয় কি যেন নাই। আবার কোন কোন বাসায় গেলে অনেক কিছুর অভাব সত্ত্বেও সবকিছু পরিপূর্ণ মনে হয়’। আমার এই শুরুর কথা দিয়ে লেখার ইতি টানবো।
শুয়ে থেকে অলস সময় কাটানো আমার জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি। বড় মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ঢাকায় এসে যানজটে পথ চলায় বাধাগ্রস্ত হয়ে নাকাল হচ্ছি। রাজধানীতে বসবাসকারী লোকজন এতে অভ্যস্ত হলেও আমি কোনভাবেই তা সইতে পারিনে। এই অবস্থায় পড়ে আমার কান্না পায়।
ঢাকায় এসে এখন পর্যন্ত তিনটি বাসায় গিয়েছি। দুটো বাসায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি জিনিস থাকলেও অনেক কিছুর শূন্যতা অনুভব করেছি। পক্ষান্তরে একটি বাসায় প্রয়োজনীয় জিনিস কম থাকলেও সবকিছু পরিপূর্ণ মনে হয়েছে।
তৃতীয় বাসার অন্যন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর চারদিকে বই আর বই। এই বাসার দুইজনই কবি। একজন কবি #Altaf_Shahnewaz এবং অপরজন কবি #Fatema_Abedin_Nazla. দ্বিতীয় জন সম্প্রতি ‘হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেছেন। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ঢাকায় এসে এই বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। সবাই আমাকে রেখে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য বাইরে গিয়ে যানজটে আটকে আছে। বাসায় আমার একা সময় কাটে না।
এই বাসার আনাচে কানাচে রক্ষিত বইগুলোর ছবি তুলতে গিয়ে একটি টেবিলে অনেকগুলো বইয়ের লেখকের নাম দেখে আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়। তিনি বহু গুণের অধিকারী জনাব শাকুর মজিদ ( #Shakoor_Majid )। লেখক জনাব শাকুর মজিদকে আমি দেখেছি। তার সঙ্গে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে আমার সালাম বিনিময় হয়েছে। সেখানে তার একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। তিনি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ক্যাডেট ছিলেন- এটুকু জেনেছি।
পরে অনেকের মুখে লেখক শাকুর মজিদ সম্পর্কে অনেক সুখ্যাতি শুনেছি। মূলত তিনি একজন বহু প্রতিভার অধিকারী মানুষ। তিনি একাধারে স্থপতি ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। তিনি ছবি তোলা, লেখালেখি এবং ভিডিও চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং পুরস্কৃত হয়েছেন।
আমার রুমে বইয়ের স্তুপের প্রথম সারির প্রথম বইটির নাম ‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’। আমি বইটি হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পাতা উল্টিয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা দেখে পড়ে ফেলার চিন্তা করি। এতে বাসার সকলের ফিরে আসার জন্য আমার প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হবে না এবং মানসিক উৎপীড়ন সহ্য করতে হবে না। তাই বইটি পড়তে শুরু করি। উল্লেখ্য যে আমার বই পড়া ও পর্যালোচনা লেখার অনেক পরে সবাই যানজটের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পেয়েছে।
#মূল_উপজীব্য: প্রাক্তন একজন ক্যাডেট, ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক জনাব মামুন রশিদ বইটির ফ্ল্যাপে লিখেছেন, ‘ক্যাডেট কলেজ জীবনের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু শিখেছি। নিয়মানুবর্তীতার সাথে সাথে আমরা শিখেছি শত বিরাগের মাঝেও কিভাবে সিনিয়রদের শ্রদ্ধা করতে হয়, জেনেছিলাম শিক্ষকদের প্রেরণা, বন্ধুদের বিশ্বাস আর জুনিয়রদের ভালোবাসা মানুষকে কতটা এগিয়ে নিতে পারে’। তার এই কথাটি আমাকে বইটি পড়ায় আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে।
এরপর ‘সাকুর এখন ক্লাস সেভেনে’ শিরোনামে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক মরহুম হুমায়ূন আহমেদ বইটি সম্পর্কে ধরি মাছ না ছুঁই পানি ধরনের আলোচনা করেছেন। লেখকের সহজিয়া ভঙ্গিতে স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের কথা, আনন্দ ও বেদনার কথা উপস্থাপন ও সাবলাইম হিউমার তার পছন্দ হয়েছে। তিনি সমালোচনা করতে গিয়ে থেমে গেছেন এবং লেখক গদ্য রচনায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন বলে প্রশংসা করেছেন।
‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’-এ বেশ কিছু অধ্যায় রয়েছে। তিনি প্রথমেই তার একটি দুঃখজনক দিক তুলে ধরেন। তিনি স্বহস্তে লিখিত পান্ডুলিপি হারিয়ে হতাশ হোননি। বরঞ্চ নব উদ্যমে আবারও লিখতে শুরু করেছেন এবং অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। মূলত তিনি তাঁর পুত্রের উপর নিজের ছায়া ফেলতে গিয়ে এই লেখালেখি শুরু করেছিলেন। তিনি তার ক্লাস সেভেনের জীবনকে টার্নিং পয়েন্ট ও জীবনের অমূল্য সময় বলে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া এটি তার মতো ক্লাস সেভেনের ক্যাডেটদের অনেকের মনের কথাই ভেবেছেন।
লেখকের প্রিয় শফিক স্যার ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে যে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন লেখক ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় নিশ্চয়ই সেই ভুল ভেঙেছে। তবে তার ওয়ালী উল্লাহ স্যার ক্যাডেট কলেজকে এক ধরনের জেল স্কুল, অমনোযোগী ছেলেদের কড়া শাসনের মাধ্যমে লেখাপড়া করানো, শাস্তি প্রদান এবং কলেজের বাউন্ডারির বাইরে যেতে না দেওয়ার যে ধারণা দিয়েছিলেন তা তিনি সত্য বলে উপলব্ধি করেছেন।
ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ইত্তেফাক পত্রিকায় ফল দেখা, ভর্তির পরীক্ষার ক্রমিক নম্বর ৫৪৯ এর স্থলে ৪৪৯ বলার ফলে দৌড়ঝাঁপ, মৌখিক ও ডাক্তারি পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয় রসাত্মক আলোচনার মাধ্যমে লেখক সুচারুভাবে উপস্থাপন করেছেন।
সিলেটের বিয়ানীবাজারের (লেখকের ভাষায় সিলেটি) মাথিউরা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ২৫তম ইনটেক-এর বি ফরম-এর ক্যাডেট শাকুর, ক্যাডেট নম্বর ১২৩৬, শহীদুল্লাহ্ হাউসের ১৮ নম্বর কক্ষের ক্যাডেট হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। এরপর তিনি ক্রমান্বয়ে প্রতিটি বিষয় তুলে ধরেন। গাইড ভাই, সিনিয়রদের প্রতি জুনিয়রদের আচরণ বিধি, কাঁটা চামচের ব্যবহার, টেবিল ম্যানারিজম ইত্যাদি এবং সরি, থ্যাঙ্ক ইউ, এক্সকিউজ মি, প্লিজ প্রভৃতি শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে হাসি তামাশার মাধ্যমে উপস্থাপন এক নতুন শিল্পরূপ লাভ করেছে।
লেখক ও ক্যাডেট শাকুরের গাইড ক্যাডেট আবেদ একজন সিলেটি হওয়ায় তার প্রতি খুব সদয়। লেখক তার উচ্চারণেও কমলালেবুর গন্ধ খুঁজে পান। সিলেটি শাকুর বাড়িতে গগন নামে নাপিতের কাছে চুল কাটালেও ক্যাডেট কলেজে ঢুকে সুনীল নামক হেড বারবার-এর সামনে বাটি-ছাটের জন্য মাথা পেতে দেন। অসাধারণ হাস্যরসের মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি দিন ও প্রতিটি বিষয় তিনি তুলে ধরেছেন।
লেখক ও ক্যাডেট শাকুর মজিদ পর্যায়ক্রমে তার ফরম মাস্টার, হাউস মাস্টার, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, এ্যাডজুটেন্ট ও বিভিন্ন বিষয় শিক্ষকের ব্যাপারেও সুন্দর আলোচনা করেছেন। কারও কারও সম্পর্কে একটু ব্যতিক্রমী আলোচনাও করেছেন। এমনকি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ কর্ণেল ব্রাউনও তার আলোচনার বাইরে নন।
লেখক ‘নতুন জীবন’ অধ্যায়ে ফল ইন, লেফট রাইট, ডান-বাম, সিনা উঁচু, ফ্রন্ট রোল, সাইড রোল, অ্যাটেনশন, পুশ আপ, ফ্রগ জাম্প, ওয়াটার পলিশ ইত্যাদির দারুণ বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর তার এক বন্ধু দলিল-এর কলেজ থাকে প্রত্যাহারের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
লেখক তার অপর বন্ধু শামসুল-এর বিষয় আলোচনা করেন। শামসুল স্মার্ট বয় হিসেবে আবিষ্কৃত হয়। রবীন্দ্র হাউসের এই ক্যাডেটের গ্রামান্তর দৌড় প্রতিযোগিতায় বর্ণনার অনুরূপ আমিও একজনকে ক্যাডেটকে দেখেছি। কিন্তু তার ভুলে যাওয়ার বিষয়টি যেমন বিদঘুটে, তেমনি পরীক্ষার খাতায় ৫১ টি বানান ভুল করে মাইনাস ১৪ নম্বর পাওয়া বিবরণটি চিত্তাকর্ষক। শামসুলের লেখাপড়ায় অমনোযোগিতা এবং পরীক্ষায় খারাপ করার কারণে কলেজ থেকে প্রত্যাহার দুঃখজনক হলেও এটাই নিয়ম ছিল।
অধ্যক্ষ মহোদয়ের হাউস পরিদর্শন, কুপন-এর ব্যবহার, ফান্টা পানের সুবিধা, রম্বস বিস্কুট, সাপ্তাহিক ছুটি উপভোগ, ৬২ দিন পরে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর অভিজ্ঞতার বিবরণ, বাড়িতে ফিরে নিজের পরিচিত সব অপরিচিত মনে হওয়া (এটি ক্যাডেটদের অন্যতম বিতর্কিত ও নেতিবাচক দিক বিবেচিত হয়), নিজের বাড়ি গিয়ে ক্যাডেট কলেজের পরিবেশের মতো স্বজনদের সঙ্গে আচরণ করা এবং টার্ম অ্যান্ড রিপোর্ট, বাড়ি থেকে কলেজে ফেরার পর লাগেজ চেকিং, কলেজে প্রচলিত বিভিন্ন খেলাধুলার মতো বিষয়গুলোর ময়নাতদন্ত করতে লেখক ভুলেননি।
লেখক ও ক্যাডেট শাকুর প্যারেন্টস ডে সম্পর্কে একটি চরম সত্য তুলে ধরেছেন। এটা সত্যই দুঃখজনক। তার কবিতা লেখা, মিউজিক ক্লাব থেকে বহিস্কার এবং সাঁতার শিখতে গিয়ে ক্যাডেট কবির-এর মৃত্যুর কথা তুলে ধরেছেন। তিনি আবুল আশরাফ নূর স্যারের ‘হিউম্যান কোবরা’ নামক যে কবিতার কথা বলেছেন আমি সেটা নিজেও স্যারের মুখে আবৃত্তি শুনেছি এবং তার অঙ্গভঙ্গি দেখেছি। লেখকের বন্ধু প্রসেনজিৎ চাকমার কথাও সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
লেখক ক্যাডেট কলেজে প্রচলিত মঞ্চ প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো এবং এতে জড়িত ও সম্পৃক্ত সকলের কথা, তাদের কষ্টের বিস্তারিত, ব্যর্থ মুষ্টিযোদ্ধা ক্যাডেট বাশার এবং তার প্রেষণা প্রদানের সক্ষমতা সম্পর্কেও সুন্দর আলোচনা করেছেন।
১৯৭৯ সালে লেখক অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হোন। তিনি সিনিয়র হওয়ার আশায় সপ্তম শ্রেণির ক্যাডেটদের কলেজে যোগদানের জন্য অপেক্ষা করেন। অন্যান্য দিন ক্যাডেটদের জন্য ইংরেজিতে কথোপকথন ও কমান্ড প্রচলিত হলেও একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের সম্মানে বাংলা ভাষায় কথোপকথন ও কমান্ড দেওয়া নিয়ে লেখক হাস্যরসের অবতারণা করেন।
ফেয়ারওয়েল ডিনার ও মিস্টার নাসির শিরোনামের অধ্যায়ে লেখক কলেজের বিভিন্ন সময় পরিবেশিত খাবারের বিশদ বিবরণ এবং খাদ্যাদি নিয়ে পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর ওল্ড টুয়েলভের বিদায় অধ্যায়ে একটি ইনটেক-এর ক্যাডেটদের প্রতিবাদী তবে অন্যায় আচরণের ফলও তুলে আনেন।
লেখক টুয়েলভের ক্যাডেটদের বিদায়কালীন ওদের রহস্যময় আচরণের বিষয়টি আলোচনা করেন। বিদায়ী ক্যাডেটরা বাসে ওঠার আগে জুনিয়র ক্যাডেট, শিক্ষক ও নিজেদের পরস্পরের গলা জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও বাসে উঠেই তারা হাসাহাসি করে এবং উল্লাস প্রকাশ করে-এটা সত্যই এক অদ্ভুত আচরণ বটে।
‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’-এর শেষ অধ্যায়ের নাম ‘নতুন অধ্যায়ের সূচনা’। ১৯৭৯ সনের ১ জুলাই সপ্তম শ্রেণির ক্যাডেট কলেজে যোগদান করে। লেখক ও ক্যাডেট শাকুর নবাগত ক্যাডেট জাবের-এর গাইড নিযুক্ত হোন। ক্যাডেট জাবের লেখকের কাছে তার বাবার খোঁজ জানতে চাইলে লেখক যে উত্তর দেন তা শুনে ক্যাডেট জাবের যেভাবে ক্যাডেট শাকুরের দিকে তাকায় ঠিক তেমনিভাবে ১ বছর আগে ক্যাডেট শাকুর তার গাইড ক্যাডেট আবেদের দিকে তাকিয়ে ছিল। চমৎকার এক সমাপ্তি।
#শেষ_কথা: কোন কোন বই পড়ে অনেক কিছু জানা হয়। তবুও মনে হয় কি যেন জানা হয় নাই। আবার কোন কোন বই পড়ে অনেক কিছু অজানা থেকে গেলেও সবকিছু পরিপূর্ণ মনে হয়। লেখকের এই আত্মজৈবনিক গ্রন্থটি পড়ে আমার সেই মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে।
ক্যাডেট কলেজে আটাশ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মনে হয়েছে তিনি সযত্নে অনেক বিষয় এড়িয়ে গেছেন অথবা প্রতিষ্ঠান ও ক্যাডেটদের সম্মান রক্ষার্থে ইচ্ছেকৃত অনেক বিষয় গোপন করেছেন। অথবা তিনি দীর্ঘদিন পর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেক কিছু ভুলে গেছেন।
লেখক এই বইয়ের শেষ পর্যায়ে তার সকল সহপাঠির পরিচয় তুলে ধরেছেন। তার বাবা-মার ও ভাই বোনের ছবি, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের কিছু ছবি এবং তার শিক্ষকগণের দুস্প্রাপ্য ছবি সংযোজন করেছেন। সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় এসব এই বইটিকে এক অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে এবং এক ব্যতিক্রমী বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে।
৮৭ পৃষ্ঠার বইটির নামকরণে নতুনত্ব, লেখকের সাবলীল উপস্থাপনা ও বর্ণনা ভঙ্গি যেকোন স্তরের পাঠককে চমৎকৃত করবে। সিলেটি তথা আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহারও আমার কাছে দোষণীয় মনে হয়নি। সার্বিক বিবেচনায় এটি নবীন ক্যাডেটদের জন্য অবশ্য পঠনীয় এবং অতুলনীয় দালিলিক তথ্য সমৃদ্ধ গ্রন্থ বলে মনে হয়েছে।
‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’ এক নিঃশ্বাসে পড়ার মতো অত্যন্ত সুখপাঠ্য একটি বই। তবে আমার আক্ষেপ এই, লেখক আমার পাকা ধানে মই দিয়েছেন। কেননা আমি আরও অনেক বিষয়সহ (গার্লস ক্যাডেট ও বয়েজ ক্যাডেট কলেজের ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে) লেখার চেষ্টা করেছি। তিনি আমার আগে তা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং আমি অভাগা বইটির লেখকের প্রতি কিঞ্চিত ঈর্ষা পোষণ করলে তা দোষণীয় হবে কি!
ধন্যবাদ সবাইকে।