শাকুর ভালো থাকুক- মাহফুজুল হক জগলুল

১৯৮৮ সালে বুয়েটের রজত জয়ন্তী স্মরণিকা উপকমিটির ছবি।
শাকুরের কথা মনে হতেই মনে আসে আজ থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগের একটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত হাসিখুশি উচ্ছল ছেলে কিছুটা লেডিস ডিজাইনের একটা বিদেশি লাল সাইকেল আর ক্যামেরা নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাস বা তিতুমীর হল থেকে এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করছে। মানুষ সাইকেল চালায় সাধারণত সামনের দিকে তাকিয়ে, শাকুর সাইকেল চালাতো ডানে-বামে তাকিয়ে, কখনো কখনো আবার পিছন দিকে তাকিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে বলতে। ক্যাম্পাসে যেখানেই কোন ঘটনা ঘটছে সেখানেই শাকুর হাজির, কখনো সাংবাদিক হিসেবে হাজির, কখনো অবজারভার হিসেবে হাজির। সেই থেকে আজ পর্যন্ত শাকুর খুব ভালো একজন অবজারভার। পরবর্তীতে তার সাহিত্যকর্ম আর লেখালেখিতে এই অবজারভেশনের ব্যাপারটা খুব সুস্পষ্ট। সারাদিন হৈ-হুল্লোড়ের মাঝে থাকলেও সে নিয়মিত নামাজ পড়তো, অনেকের কাছে একথাও শুনতাম সে গভীর রাতে তাহাজ্জুদ নামাজও পড়ে। স্মৃতি যদি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করে থাকে তবে এখনো মনে আছে তিতুমীর হলের সাউথ ব্লকের নিচ তলার সিড়ির পাশের রুমে তাকে আমি একদিন আবিষ্কার করি একা একা একটা তোষক বিহীন খাটের তক্তার উপর শুয়ে আছে। রোগাক্লান্ত ও শুষ্ক মুখমণ্ডল কিন্তু সারা মুখে ছড়িয়ে আছে সুন্দর সেই পরিচিত হাসি, তাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো তার পিঠে একটা মেজর অস্ত্রোপচার হয়েছে পিজিতে, ডাক্তারের ইনস্ট্রাকশান অনুযায়ী তাকে এভাবে থাকতে হচ্ছে।খুব আশ্চর্য হয়ে শুনলাম অস্ত্রোপচারসহ সব বিপদ সে মোটামুটি একা একাই সামলিয়েছে এবং আত্মীয়স্বজন বা পরিবারপরিজন হতে বহুদূরে একা একা এই নির্জন রুমের মধ্যে জীবনের এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে চলেছে। তার সেই অদম্য সাহস আর জীবনীশক্তি সেদিন আমাকে প্রচন্ড চমৎকৃত করেছিলো। পরবর্তীতে তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা আরো অনেক বাড়ে, সে অনেকটা আমাদের জুনিয়র বন্ধু হয়ে যায় যা আজ পর্যন্ত অনেকটা বজায় আছে।
তখনকার অনেক পত্রিকায়ই সে নিয়মিত লিখতো। সেসব কথা সবাই জানে। সেসময় একদিন তারকালোক নামের একটা রঙিন প্রচ্ছদের পত্রিকা সে আমার হাতে দিয়ে বললো, পড়ে দেখেন। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম পত্রিকায় আমার সুন্দর একটা ছবি আর আমার সত্যমিথ্যা নানান গুণাবলি নিয়ে একটা লেখা সে ছাপিয়েছে। পত্রিকাটি আমি যত্ন করে রেখেছিলাম অনেকদিন, এখন আর খুঁজে পাইনা। শাকুরের সাথে বুয়েট জীবনে অনেক স্মৃতি, অনেক ঘটনা।কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখবো? সেসব লিখতে হলে অন্য পরিসরে লিখতে হবে। আজ না। এরপর জীবন অনেক এগিয়েছে, আমরা একেকজন সময়ের সাথে সাথে অনেক বদলে গেছি। পঁয়ত্রিশ বছর অনেক সময়। শাকুর আজ ন্যাশনাল সেলেব্রিটি। শাকুরকে সবাই চেনে, শাকুরের গড়ে ওঠার সময়ে আমরাও ওর সাথে ছিলাম এটা ভেবে খুব ভালো লাগে। পরবর্তী জীবনে হাছন রাজা শাকুররে ভিতরে প্রবেশ করে। খুব গভীর ভাবেই প্রবেশ করে। এখন কোনটা আমার সেই চেনা শাকুর আর কোনটা হাছন রাজা তা আমি মাঝে মাঝে বুঝে উঠতে পারিনা। তবে এখনো সময় আছে হয়তো একদিন বুঝতে পাড়বো অথবা সবকিছু বোঝার দরকার নেই। আজ আমার প্রিয় ভাইটির জন্মদিন। পরম করুনাময়ের কাছে প্রার্থনা ওর জীবন, কর্ম ও স্বাস্থ্য মঙ্গলময় হোক। শাকুর ভালো থাকুক।

Mahfuzul Huq Zaglul is with Shakoor Majid.

২২ নভেম্বর ২০২১

মন্তব্য
Loading...