রিদম অন দ্য স্টেজ – শাকুর মজিদের

শাকুর মজিদের রিদম অন দ্য স্টেজ ঃ ক্যামেরায় মঞ্চের কারুকাজ

কাজল রশীদ শাহীন

‘রিদম অন দ্য স্টেজ’ আমাদের জন্য একটি বিশাল প্রাপ্তি। সংরক্ষণের প্রচেষ্টা আমাদের নেই বললেই চলে। এই সময়ে শাকুর মজিদ ও টোনাটুনির মিলিত প্রয়াস আমাদের জন্য আশার আলো। প্রকাশিত ১২০ পৃষ্ঠার চার রঙের ‘রিদম অন দ্য স্টেজ’- বইয়ের মোড়ক উন্মোচন পর্বে শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের এই ছিল অভিমত। আর নাট্যজন আতাউর রহমানের অভিমত হলোÑ শাকুর মজিদ যেভাবে প্রতিটি নাট্যদলের জন্য দুটো পৃষ্ঠা ছবি দিয়ে চিরজীবনের জন্য চিরচিহ্ন করে রাখলেন তার জন্য আমরা গর্বিত।

সঙ্গত কারণেই কৌতহলী পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, কী আছে ‘রিদম অন দ্য স্টেজে’? যার জন্য প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বরা আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন, গর্বিত হয়েছেন। প্রত্যুত্তরে একথা অনায়াসে বলা যায়Ñকী নেই ‘রিদম অন দ্য স্টেজে’? মঞ্চের যে কেউই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, মঞ্চ-কর্মীদের জন্য এটি একটি বড় ধরণের প্রাপ্তি। দুই বাংলার মঞ্চ কর্মীদের ইতোপূর্বে এ ধরণের প্রাপ্তি যোগ ঘটে নি। এমনটি হলে, মঞ্চের ইতিহাস জীবন্ত হয়ে থাকত। পাদপ্রদীপের আলোয়Ñনন্দিত কুশীলবরা নাট্যকাহিনীতে যেভাবে নিজেদের উপস্থাপন করেছিল তার সবই আমাদের সামনে অক্ষয় হয়ে থাকত, অনির্বাণ হয়ে থাকত।

বাংলা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের ইতিহাস দু’শ বছরের বেশি সময়ের। দীর্ঘ এই সময়ে কত নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে তার হিসেব নেই। সা¤প্রতিক কালের নাটকের হিসাবও যে আমরা রাখি, তাও কিন্তু নয়। আর সেটা যে রাখি না, তা নতুন করে প্রতীয়মান হলো শাকুর মজিদের ‘রিদম অন দ্য স্টেজ’ প্রকাশিত হওয়ার পর।  প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০০৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার মঞ্চে বিভিন্ন নাট্যদলের ৬২টি নাটক ও নৃত্যনাট্যের প্রায় আড়াইশ’ আলোকচিত্র নিয়ে বেরিয়েছে শাকুর মজিদের ‘রিদম অন দ্য স্টেজ’ বইটি।

এ প্রসঙ্গে আলোকচিত্রী শাকুর মজিদ বলেন, নিজের ব্যক্তিগত আগ্রহে আমি ছবি তুলতাম। দিনের বেলার ব্যস্ততায় আমি সময় করতে পারতাম না। এক সময় বেছে নিলাম মঞ্চনাটকের আলো-আঁধারীর খেলাকে।

উলে­খ্য, ‘রিদম অন দ্য স্টেজ’ গ্রন্থটির প্রকাশনা উপলক্ষে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী প্রদর্শন কক্ষে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। যার উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায় এবং পল­ী কবি জসীমউদ্দীনের স্ত্রী বেগম মমতাজউদ্দীন।

‘রিদম অন দ্য স্টেজ’ বইটিতে সা¤প্রতিক সময়ের মঞ্চায়িত নাটকের আলোকচিত্র ও নাট্য প্রযোজনার নাম সংযোজন করা হয়েছে যা মঞ্চকর্মী, নাট্যগবেষক ও নাট্য-সুহৃদদের কাছে একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচ্য। শাকুর মজিদের মতো এই প্রয়াস যদি অনেক আগেই কেউ গ্রহণ করত, তাহলে আমাদেরকে আলোচিত সব নাটকের নাম শুনে কেবল তৃপ্ত হতে হতো না, আমরা আলোকচিত্র থেকে সহজেই ঐ নাটকের মঞ্চের রিদমটাকেও ধরতে পারতাম যা নাট্য গবেষকদের কাছে তো বটেই অন্যদের কাছেও ঈর্ষণীয় প্রাপ্তি যোগ ঘটাতো। পূর্বে হয়নি, দুই বাংলাতেই হয়নি, আশা করি, শাকুর মজিদের দেখাদেখি আগামীতে অন্যরাও এ ব্যাপারে উৎসাহিত হবে এবং হওয়াটা যেমন জরুরি, তেমনি অবশ্যম্ভাবী।

‘রিদম অন দ্য স্টেজ’এর আলোকচিত্রসমূহকে সাদামাটাভাবে আলোকচিত্র বলা যুক্তিযুক্ত নয়। প্রচলিত ধারণায় আলোকচিত্র বলতে যা বোঝায় তাও নয়। আলোকচিত্রে শুধু কুশীলবদের উপস্থিতি ঘটেনি, কুশীলবদের সঙ্গে নাটকের নির্যাসটাকেও ধরা হয়েছে। এমনকি লাইটেরও যে একটি নিজস্ব ভাষা রয়েছে তা আলোয় আলোয় ধরা পড়েছে। মঞ্চের স্পিড বলে যে টার্মটি বহুল ব্যবহৃত নাট্যকর্মীদের মাঝে, সেই স্পিডটা স্থির আলোকচিত্রে অনিন্দ্য সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে। সেই গতিময়তা এতটাই প্রাণবন্ত যে ‘রিদম অন দ্য স্টেজ’ এর সন্নিবিষ্ট আলোকচিত্রগুলো দেখার সময় যে কারো ভ্রম হতে পারে এই ভেবে যে, তিনি গতিশীল আলোকচিত্র দেখছেন। আর তখুনি উপলব্ধি হয় শাকুরের ক্যামেরার-ভাষা বিষয়ের গভীরতাকে কতটা ছুঁয়ে যেতে সক্ষম।

আলোকচিত্র থেকে নাটকের কস্টিউম, সেট সম্পর্কেও ধারণা পেতে কষ্ট হয় না।

এ কারণে একথা নিশ্চয় অত্যুক্তি হবে না যে, ‘রিদম অন দ্য স্টেজ’-এ মঞ্চের প্রাণ-প্রাচুর্যের সবই রয়েছে ক্যামেরার ভাষায়।

প্রকাশ : ম্যাগাজিন অন্যদিন, ২০০৩

 

 

 

 

মন্তব্য
Loading...