আয়নায় ভগ্নির মুখ- ১৯৮৮

আমার নিজের ক্যামেরা নাই। রুমমেট শওকতের একটা এসেছে পেন্ট্যাক্স কে-থাউজ্যান্ড (k-1000)। সেটা আমার কাছেই থাকে, আমি দেখে রাখি। এর মধ্যে বুয়েট বন্ধ হয়ে গেলো। হল ছাড়তে হবে । আমি নিউমার্কেটের মোল্লার দোকানে গিয়ে দুইটা সস্তার সাদাকালো রিফিল কিনে কমলাপুর রয়ানা দিলাম। এক ট্রেনে বাড়ি।
 
বাড়িতে গিয়ে সাব্জেকট খুঁজি। শবনম আমার খুব অনুগত । ওরে যা বলি – করে। যদি বলি আইলের উপর দিয়ে দৌড়ে আয়, সে গোড়ালি মাখা কাদামাটিতে দৌড় শুরু করে। যদি বলি কচুরিপানা হাতে নিয়ে পোজ দেয়, সে গোটা দশেক কচুরিপানা দুইহাত ভরে নিয়ে আসে।
আমি যখনই ছবি তুলি আমার সাথে ঘুরঘুর করে।
 
ঘরের মধ্যে একখানা আয়না আছে আমাদের । এই আয়নাটা খুবই ফাংশনাল। সামনের ডালা খুলে দিলে ভেতরে স্নো-পাউডার-চিরুনী রাখার তাক পাওয়া যায়, রীতিমত ড্রেসিং সেলফ আর বন্ধ করে দিলে স্রেফ আয়না। এটা ১৯৬২ সাল থেকে আমাদের বাড়িতে আছে। মা নিয়ে এসেছিলেন। এখনো (২০২০ সালে) এর আয়নাটা চকচকে, কাঠেও ঘুনে ধরে নাই।
আমি এই আয়নায় নিজেকে দেখি। ভাবি নিজেকে ডাবল ডিস্ট্যান্সে ফোকাস করে কি শার্প ছবি পাওয়া যাবে ?
এই করতে করতে হঠাত দেখি শবনম আমার পাশে এসে দাড়ালো।
 
আমাকে বলে- ভাইয়া, কিতা করো ?
আমি বলি- চুপ থাক।
সে চুপ করে থাকে। আমাকে দেখে।
 
নিগেটিভ ঘেটে দেখলাম- একটাই তুলেছিলাম সে সেশনে। এক রোলে ৪০ টার মতো এক্সপোজার হয়। অনেক হিসাব করে ছবি তোলা লাগে। মাস খানেক থাকতে হতে পারে এবার। সব মিলিয়ে ৭০/৮০ টা ছবি হয়তো তোলা যাবে। ঢাকা গিয়ে আবার মোল্লার দোকানে নিয়ে যাওয়া। প্রসেস করিয়ে কয়েকটা প্রিন্ট করা, বি-টু সাইজে। আবার পরেরবার বারি এলে সেই ছবি নিয়ে এসে দেখানো …।। কখন কখনো মাস ছয় লেগে যেতো একটা ছবি তলার পর তাঁকে আবার দেখাতে।
 
সেই ছবি বয়স আজ ৩২ বছর। শবু ৪ সন্তানের জননী।
মন্তব্য
Loading...