প্রাণনাথ, ছাড়িয়া যাইওই না বন্ধুরে’

‘প্রাণনাথ, ছাড়িয়া যাইওই না বন্ধুরে’- শাহ আব্দুল করিমের লেখা এ গানটি আমার খুব প্রিয়। কিন্তু ‘মহাজনের নাও’ নাটকে এই গানটি লাগানোর মতো জায়গা পাচ্ছিলাম না।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। সুবচন এর দল নিয়ে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় আর শিলচরে ২টা শো করে বিয়ানীবাজার দিয়ে ফিরছি। গাড়িতে করিমের গান গাইছে সবাই। গানের দলের লিডার বাবুল ভাই। এর মধ্যে একবার গেয়ে বসলেন এই গান , প্রাণনাথ…।
পরিচালক সুদীপ ছিলো কাছে, তাঁকে বললাম, গানটা কেমন?
– ভালো তো। সুন্দর। এটা দেন নি কেন ?
– মাথায় আসে নাই। এখন কেমনে ঢুকান যায়?
সুদীপ শুনলো দুইবার। বাবুল ভাই ধরিয়ে দিলো, ইমরান গাইলো। গান শোনা শেষে বলল, চিন্তা কইরেন না, নেক্সট শোতে এই গান থাকবে। সরলার সাথে যে গানটা আছে সেটা একটু ছোট করে দেব আর এই গান থেকে দুই স্টেঞ্জা।

ব্যাস হয়ে গেলো।সুবচন নাট্য সংসদের ৩৩তম প্রযোজনা ‘মহাজনের নাও’ প্রথম মঞ্চে আসে ২০১০ সালের ১৮ জুন। নাটকটি এরিনা ফর্মে প্রদর্শন উপযোগী ডিজাইন করা, তাতে এটি ঢাকার শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল হল আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট মন্ডল ছাড়া আর কোথাও প্রদর্শন করা যায় না। অথচ নাটকটি প্রদর্শনের জন্য দেশ-বিদেশের নানা জায়গা থেকে ডাক আসতে শুরু হলো। ঠিক হলো, প্রসেনিয়াম ফর্মেও এর আরেকটি ডিজাইন করা হবে। মেধাবী পরিচালিক সুদীপ চক্রবর্তী সেটা করেও দিলো।

আর মাত্র ৫ দিন পর এই নাটক প্রদর্শনির ১০ বছর পূর্তি হবে। এর মধ্যে এর ১৩০টি প্রদর্শনি হয়ে গেছে। অনেকগুলো আমি দেখতে যাই মূলত এই গানটি শোনার জন্য। এটা শুনতে যত ভালো দেখতে আরো বেশি ভালো। গর্গ আমিনের চমতকার লাইটিং এর কাজ আছে এখানে। এ গানের দুই মডেল হচ্ছেন সুবর্না আর ইমরান। আমি বিরক্ত হই শাহ সালাউদ্দিনের উপর। সে বেরসিকের মতো এসে পড়ে তার ডায়লগ নিয়ে। গানটা থেমে যায়।
সুবর্না এই দলের পুরনো শিল্পী। গান ও অভিনয় দুটোতেই পারঙ্গম। এই নাটকেও দুটো গান তাঁর কন্ঠে আছে। কিন্তু এখানে পুরুষ কন্ঠের দরকার তাই এখানে গাইছে ইমরান।
ইমরান আসলেই গানের লোক। নিজের একটা একাডেমি আছে শিশুদের গান শেখায় সেখানে। এর আগে জীবনে কোনদিন মঞ্চে উঠেনি অভিনয় করার জন্য। অথচ পরিচালক তাঁকে পাকা অভিনেতা বানিয়ে ছেড়েছে। সেই প্রথম প্রদর্শনি থেকেই ইমরান আছে, সব প্রদর্শনীতেই। ‘মহাজনের নাও’- গীতল নাটক, তাঁর প্রান ভোমরা ইমরান। ইমরান গোস্মা করে নাটক করা বাদ দিয়ে দিলে মহাজনের নাও এর শো অচল হয়ে যায়।

কাজ না থাকলে খই ভাজা যায়। কোয়ারেন্টাইনে বসে এরিনা ও প্রসেনিয়াম দুই ফর্মে গাওয়া ২০১৩ ও ২০১৭ সালে দুই দেশে দুই ফর্মে প্রদর্শন হওয়া নাটকের এই গানটা দিয়ে একটা কোলাজ বানালাম আমার ফেইসবুক বন্ধুদের জন্য।
কভিড না এলে এই ১৮ জুন জমজমাট আয়োজন করে সুবচন এই নাটক প্রদর্শনের ১০ বছর পালন করতো। এখন কপালে নাই। তাই এভাবেই দেখান আর কী !

মন্তব্য
Loading...