এক আমওয়ালার গল্প
এক আমওয়ালার গল্প না শুনানো পর্যন্ত আমার পেটের ভাত হজম হচ্ছে না।
ঘটনা টা আম কেনা নিয়ে।
এটা তৃতীয় কনসাইনমেন্ট ছিল।।প্রথম বার বিকাশে এডভান্স দিয়েছি, ঠিক সময় মত বাসায় এসে দিয়ে গেছে। সুস্বাদু আম, নো কম্পলেইন।
দ্বিতীয় বার চালাক হয়ে গিয়েছিলাম। অর্ডার দিয়েই সারা। ফেলো কড়ি মাখো তেল, ক্যাশ অন ডেলিভারি।
ঠিকানা মতোই লোক এসে স্বাস্থবিধি মেনে দুয়ারে আম-লিচু রেখে টাকা নিয়ে গেছে। সুস্বাদু আম, নো কম্পলেইন।
তৃতীয় বার আরো ১০ কেজির অর্ডার ছিল, দি গ্রেট হিমসাগর। কথা ছিল ১৬ তারিখ ডেলিভারি হবে। বিক্রেতা ইনবক্সে জানালেন, একটু দেরি হচ্ছে। ২০ তারিখেই দেবে। দেক। ভালো জিনিসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
১৯ তারিখে ইনবএক্সে বিশাল এক আমসাহিত্য। কী কারনে আরো এক দিন দেরি হবে এমন চমতকার বর্ণনা পড়ে আমি প্রায় নিশ্চিত, এই বিক্রেতা আগামি মেলায় মেংগোলিট নিয়েও চলে আসতে পারেন। চমতকার লেখনশৈলী। আমি ভাবছি, আরো দুদিন দেরি করুক, তাহলে অজুহাত দেখানোর জন্য যে সাহিত্য রচিত হবে তা হিমসাগরি স্বাদ ছাড়িয়ে দেবে।
কিন্ত পরদিন ফোন এসে গেলো।
একজন বললেন, তিনি মগবাজার মোড়ে, কী করে বাসায় আসবেন তা বলে দিতে।
আমি বলি – বিস্তারিত টেক্সট করা আছে। পড়ে ফেলুন।
– আপনার লেখা অনেক লম্বা। আমার টাইম নাই, আপনি মুখে বলুন।
আমি মুখেও বলি।……… এক সময় ১৮ তালা বিল্ডিং, মোনা টাওয়ার, ব্রাক ব্যাংক, ডানে ঢুকে যাবেন।
– ঠিক আছে, আমি কাছে এসে ফোন দিব।
কিছুক্ষণ পর ফোন। – এখানে অগ্রনী, জনতা আছে, বেরাক ব্যাংক তো দেখি না।
– দেখেন ১৮ তালা বিল্ডিং আছে।
– এখানে সবই ত বিল্ডিং, উচা উচা বিল্ডিং
– আরে ভাই ১৮ তালা তো একটাই আছে।
– ভাই, আমি এতো তালা গুনতে পারবো না। টাইম নাই। আমি এখন কেমনে আসব বলেন।
– আমার ঠিকানা লেখা এস এম এস তো আছে আপনার কাছে। আছে না?
– তা আছে।
– আপনি গুগল করে আসতে পারবেন?
– কী কন?
– আচ্ছা, ঠিকাছে, আপনি কাউরে আমার ঠিকানা দেখান, সে বাসার পথ দেখাই দিবে।
এর পর লাইন কাটা।।আমি ভাবছি যে কোন সময় নীচ থেকে ফোন আসবে। স্বাস্থবিধি মেনে আমের ঝুড়ি নামবে। আজ তিন দিন হয়ে গেল, আম কি রাজশাহী ফেরত গেসে?
তা যাক। আমার কানে বাজছে একটি বাক্য – এখানে অনেকগুলাই বিল্ডিং, ১৮ তালা আমি গুনতে পারবো না।
বিদ্রঃ
কোন কোন কৌতুহলী ফেইসবুকার সেই আমবিক্রেতার পাঠানো ইনবক্সও পড়তে চেয়েছেন।
যদিও ইনবক্স একেবারেই ব্যক্তিগত পত্র, একে আমজনতার কাছে না দেয়াই উত্তম। কিন্তু সাহিত্যমূল্য বিবেচনায় তা প্রকাশ করা হলো ঃ
“সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম আর বুকভরা আশা নিয়েও আগামীকাল (শনিবার) আমরা আমাদের আম ডেলিভরী দিতে পারছিনা। সকাল থেকে সব কিছু পরিকল্পনা মতই যাচ্ছিল কিন্তু দুপুরের অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিটা সকল পরিকল্পনা পন্ড করে দেয়।… …. আপনাদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী যদিও বিষয়টা প্রাকৃতিক। বৃষ্টির পরেও আমাদের টীম এর চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না কিন্তু সময় আর কাভার করতে পারি নাই। ইনশাআল্লাহ আগামী রবিবার আমরা আমাদের আম ডেলিভরী দেব। তবে আমাদের স্বরণ রাখা উচিত আল্লাহই সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।”