হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ট্রিলজি – গোলাম কিবরিয়া
সমকাল ঃ কালের খেয়া / বইয়ের ভুবন ১৬ এপ্রিল ২০২১
শাকুর মজিদ হলেন একজন স্থপতি, নাট্যকার, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও চিত্রগ্রাহক। ভ্রমণকাহিনি ও জীবনী সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বিভিন্ন সময়ে বরেণ্য ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক অনেক লেখা লিখেছেন। যা পাঠকের কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে লেখালেখি, নাট্যনির্দেশনা ও চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যাপৃত ছিলেন। এর মধ্যে প্রায় ৩২ বছর ধরে শাকুর মজিদ তাঁর সঙ্গে মিশেছেন। একটা পর্যায়ে শাকুর মজিদ ছিলেন মূলত হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিজীবনের অন্তরঙ্গ অনুরাগী আর কৌতূহলী পর্যবেক্ষক।
হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিকথা লিখতে গিয়ে শাকুর মজিদ নিজের একসঙ্গে বেড়ে ওঠার কাহিনি শুনিয়েছেন। এ নিয়ে প্রথমা প্রকাশনী থেকে ‘হুমায়ূন আহমেদ যে ছিল এক মুগ্ধকর’ এবং অন্যপ্রকাশ থেকে ‘নুহাশপল্লীর এইসব দিনরাত্রি’ নামে দুটি বই প্রকাশিত হয়। নন্দিত ঔপন্যাসিককে নিয়ে তার মৃত্যুর পর শাকুর মজিদের বেশ কিছু রচনা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল তা নিয়ে ‘গ্রন্থকুটির’ বের করে অভিনেতা হুমায়ূন ও অন্যান্য। মূলত এই বই তিনটি পাঠকদের এক মলাটে দেওয়ার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে শাকুর মজিদের ‘হুমায়ূননামা ট্রিলজি’। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখকের একান্ত নিজস্ব অনুভূতিগুলোই এই বইতে প্রকাশ পেয়েছে। বড় মাপের কোনো মানুষের কথা বলতে গিয়ে তাঁদের কাছের মানুষেরা প্রায়শই অতিশয়োক্তি করে তাঁদের রচনাকে ভারাক্রান্ত করেন, সাধারণ পর্যায় থেকে তুলে তাঁকে মহামানবের স্তরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। শাকুর মজিদ এ ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ বই কেবল স্মৃতিকথাই নয়, এর মধ্যে একজন সাধারণ লেখকের অসাধারণ হয়ে ওঠা এবং তাঁর বিবর্তনের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
বইয়ের প্রথম অংশে আছে- হুমায়ূন আহমেদ :যে ছিল এক মুগ্ধকর। এখানে পাঠক বিভিন্ন শিরোনামে লেখকের হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক লেখা পাবে। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হুমায়ূন আহমেদকে তিনি দেখেছেন, জেনেছেন, তাঁর সৃষ্টিশীলতার উৎসগুলো চিহ্নিত করার প্রয়াস পেয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়েনের সাক্ষী হয়েছেন। আর যতই হুমায়ূনকে দেখেছেন শাকুর মজিদ, ততই মুগ্ধ হয়েছেন। এই মুগ্ধতার প্রকাশ যে ছিল এক মুগ্ধকর।

২০০৮ সালে শাকুর মজিদের লেখা একটি বই পড়ে হুমায়ূন আহমেদ তাঁকে বাসায় দাওয়াত দিলে সূচনা হয় আরেক পর্বের। অত্যন্ত ঘনিষ্ঠদের তালিকায় প্রায় অপরিহার্য হয়ে ওঠেন শাকুর মজিদ এবং এই ঘনিষ্ঠতা অব্যাহত থাকে ২০১২ সালে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।
বইয়ের দ্বিতীয় অংশে পাঠকদের জন্য রয়েছে- নুহাশপল্লীর এইসব দিনরাত্রি। নুহাশপলল্গীর এইসব দিনরাত্রি প্রসঙ্গে লেখক বলেন, এ বইটি কেবলমাত্র নুহাশপলল্গীকে ঘিরে আমার ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতির প্রকাশ। নিজের অনুভূতি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নুহাশপল্লীর গাছপালা, ভাস্কর্য, নানারকমের স্থাপনা এবং সেসবকে কেন্দ্র করে হুমায়ূন আহমেদের যাপিত জীবন নুহাশপল্লীতে কেমন ছিল, সেটি প্রকাশের চেষ্টা করেছি। বইয়ের শেষাংশে আছে অভিনেতা হুমায়ূন ও অন্যান্য। সব মিলিয়ে লেখক শাকুর মজিদের হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কাটানো বিশেষ কোনো মুহূর্তের, দিনের, সময়ের, আড্ডায় বা ভ্রমণে; অথবা বইয়ের মাধ্যমে তাঁর সন্নিকট হওয়ার বর্ণনা পাবেন পাঠক।
সমকাল ঃ কালের খেয়া / বইয়ের ভুবন ১৬ এপ্রিল ২০২১